বাংলার কৃষক (২৫ পয়েন্ট)

  পয়েন্ট সমূহ
(লোড হচ্ছে...)
    Image by Sasin Tipchai from Pixabay


    ভূমিকা:

    সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষক। তাই এদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন লোকই কৃষি পেশার সাথে জড়িত। এমনকি বাকি ২০ জনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এজন্য এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষিব্যবস্থা উন্নতি ও অবনতির উপরই সারা দেশ তাকিয়ে থাকে। অথচ এই কৃষিব্যবস্থার কান্ডারি যারা সেই কৃষক সমাজই আজ অনাদৃত, লাঞ্ছিত ও উপেক্ষিত। কবি বলেছেন-

    "ভোর না হতেই লাঙল কাধে মাঠপানে কে যায়
    সে আমাদের গায়ের কৃষক, বাস আমাদের গায়।"

    কৃষি ও কৃষক:

    বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জুড়ে আছে এদেশের কৃষি ও কৃষক । এদেশের যেসকল সোনার মানুষেরা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে আমাদের সারা দেশের খাদ্যশস্যের জোগান দিয়ে থাকেন তারাই হলেন কৃষক। বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো হচ্ছে কৃষিভিত্তিক । আর কৃষি কাজ করে যার জীবিকা নির্বাহ করেন, তারাই হলেন কৃষক। কৃষককুলের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে, ত্যাগে, ঘামে গড়ে উঠেছে এদেশের অর্থনীতি । দুঃখ দারিদ্র ,লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে তারা যেভাবে দেশের ও দশের সেবা করে যাচ্ছে তার তুলনা নেই। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এদেশ ভরে উঠে ফসলের সমারোহ আর আমরা পাই ক্ষুধার অন্ন। কৃষকের উৎপাদিত কাঁচামাল বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হয় বৈদেশিক মুদ্রায়, সম্ভব হয় শিল্পায়ন । তাই এদেশের অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো কৃষি ও কৃষক।

    বাংলাদেশের কৃষক:

    ‘ভোর না হতেই লাঙ্গল কাঁধে, মাঠ পানে কে যায়।
    সে আমাদের গাঁয়ের কৃষক, বাস আমাদের গায়।’
    বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এমনই কৃষকের বাস। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই, প্রতিটি কৃষক লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে মাঠ পানে ছুটতে থাকে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে ফসল ফলায়। ভোরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে তার এই পরিশ্রম। এভাবেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিটি কৃষক আমাদেরই জন্য উৎপাদন করে যাচ্ছে খাদ্য শস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য।

    কৃষিনির্ভরতা:

    বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষক রাখে এক সুদূরপ্রসারী ভূমিকা। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যে এদেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। জাতীয় আয় সৃষ্টিতে কৃষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যোগায় আমাদের কৃষকেরাই। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। ফলে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এদেশের অধিকাংশ খাদ্যের জোগানদাতা কৃষক। ভাত, ডাল, আলু, তরকারি, তৈলবীজ বাঙালির প্রধান খাদ্য। এগুলো সবই কৃষক উৎপাদন করে থাকে যা খেয়ে আমরা জীবনধারণ করে থাকি।

    কৃষকের জীবন:

    কৃষকের জীবনে দুঃখ কষ্টে ভরপুর। অভাব তার নিত্যদিনের সঙ্গী। সে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠিন পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলায়। কিন্তু সেই শস্যের ন্যায্য মূল্য সে কখনোই পায় না। সে পায় না উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত অর্থ, পায় না শক্তিশালী বলদ, পায় না ভালো বীজ। সে যা পায় তা হচ্ছে ক্ষুদা, তা হচ্ছে ব্যাধি, তা হচ্ছে শোষণ। বাংলার কৃষকেরা বহুকাল ধরেই শোষণের শিকার। তাদের চাওয়া অত্যন্ত সীমিত। কেবল খেয়ে পরে বেঁচে থাকা। কিন্তু সেই বেঁচে থাকার অধিকার থেকেও তারা আজ বঞ্চিত। 

    কৃষকের অতীত ব্যবস্থা:

    অতীতে গ্রামবাংলার কৃষকদের জীবন সুখী ও শান্তিময় ছিল। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর স্বাস্থবান কৃষক ছিল বাংলার সাধারণ দৃশ্য। সারা বছর খেয়ে পরেও কৃষকের ঘরে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকত।  তখন তাদের জীবনযাত্রা ছিল সহজ সরল। তারা তাদের অন্নবস্ত্রের সংস্থান অনায়াসে করতে পারতো বলে পূজা-পার্বণে এবং ঈদ উৎসবে তাদের আনন্দের সীমা থাকত না।

    কৃষকদের বর্তমান অবস্থা:

    বর্তমানে কৃষকদের জীবন দুঃখ কষ্ট আর অভাব অনটনে পরিপূর্ণ। এদেশের কৃষক এখন জীবনশীর্ণকায় গরু দিয়ে ফসল ফলাচ্ছে। আর গভীর হতাশায় গ্লানিময় জীবনযাপন করছে। দারিদ্র আর রোগ-শোক তাদের নিত্য সাথী, দুবেলা অন্ন তাদের নেই। রোগের ওষুধ নেই, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও নেই। একবেলা খেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে পুড়ে তারা আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলে। কারো বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। নিজেদের ভাগ্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে, নিরক্ষতার অভিশাপ মাথায় নিয়ে অজ্ঞতার অন্ধকারে কাঠের লাঙল সম্বল করে জীবনসংগ্রামে আজ তারা ক্ষতবিক্ষত।

    জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষক:

    আমাদের অর্থনীতির মূল মেরুদন্ডই হলো কৃষি। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অপরিসীম। কৃষির উৎপাদন কম হলে দেশের খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করার ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম হয় আকাশ্চুম্বী। শুধু তাই নয়, দেশের যেসকল শিল্পকারখানা কৃষির কাচামালের উপর নির্ভরশীল তাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়লে দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাই দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে কৃষি ও কৃষকের উপর নির্ভরশীল।

    বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা:

    আমাদের দেশের অর্থনীতি কৃষির উপর দন্ডায়মান। তাই দেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষির বিভিন্ন কাচামাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে আজ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বড় বড় শিল্পকারখানাগুলো এসব কৃষির কাচামালগুলোকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছে যা বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। এতে আমাদের দেশ লাভ করছে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

    খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে কৃষি ও কৃষক:

    আমরা জাতি হিসেবেই মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ-ভাত আমাদের প্রধান খাবার। তাছাড়া আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, মাছ, শাকসবজি, ডাল, ফল ইত্যাদি যার জোগান দেয় আমাদের দেশের কৃষকেরাই। আমাদের দেশের প্রায় ৯০ ভাগ ফসলের জমিতেই খাদ্যশস্য চাষ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ধানচাষ করা হয়। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছরই ফসল নষ্ট হয়। তাছাড়া দেশে জনসংখ্যার তুলনায় চাষের জমি কম হওয়ায় চাষিরা দেশের সম্পূর্ণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তবে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ খাদ্য চাহিদা দেশের চাষিরাই পূরণ করে থাকেন। 

    পুষ্টি সমস্যা সমাধানে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা:

    বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো পুষ্টিহীনতা। আমাদের দেশের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রতিবছর অনেক শিশু পুষ্টিহীনতার কারণে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। দেশে প্রতি ১০০ জন মহিলার মধ্যে ৭০ জনই রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। তাছাড়া প্রতিবছর ভিটামিন এ এর অভাবে মারা যাচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতো শিশু। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গলগন্ড রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৬ জেলার প্রায় ১২ লাখের বেশি মানুষ। আমাদের দেশের কৃষকেরা বিভিন্ন পুষ্টিকর শাকসবজি ও ভিটামিনসমৃদ্ধ ফলমূল উৎপাদনের মাধ্যমে এসব পুষ্টির সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

    শিল্পায়নে কৃষি ও কৃষকের অবদান:

    দেশের শিল্পের উন্নয়নে কৃষি ও কৃষকের ভুমিকা অবর্ণনীয়। দেশের সবচেয়ে বেশি মুদ্রা অর্জনকারী পণ্য পোশাকের কাচামালও আসে কৃষি থেকেই। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত চা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ফসলি জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের গম যা থেকে তৈরি করা হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের আটা ও ময়দা। এসব ছোট-বড় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে একটু একটু করে দেশের শিল্পায়নে অগ্রগতি হচ্ছে।

    রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান:

    বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ আসে কৃষিপণ্য থেকে। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ হলো পাট। কারণ এই পাট থেকে তৈরি হয় সুতা, দড়ি, চট, বস্তা, থলে, কার্পেট ইত্যাদি যা বিদেশে বিক্রি করার মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাচ্ছে। পাটের পরই চা উৎপাদনের কথা আসে যা সারা বিশ্বে বহুল সমাদৃত। আমাদের দেশের পোশাকশিল্পের মূল কাচামালও আসে কৃষি থেকেই। এসকল পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয় দিন দিন ত্বরান্বিত হচ্ছে যা আমদের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

    কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা:

    কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা আমাদের দেশের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এখানে কর্মসংস্থানের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। তবে যেহেতু কৃষিকাজে অনেক জনশক্তির প্রয়োজন হয় তাই এটি অনেক ক্ষেত্রেই বেকার জনগণের জীবিকার উপায় হতে পারে। তাছাড়া কৃষির বিভিন্ন কাচামালের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন কারখানা যা ক্রমাগত অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। ফলে দেশের বেকার সমস্যা দূর হচ্ছে।

    কৃষি ও কৃষকের সমস্যা:

    আমাদের দেশের কৃষিখাত নানা ধরণের সমস্যার সাথে জর্জরিত। তাই চাষাবাদ চালিয়ে যেতে আমাদের দেশের কৃষকদের প্রতিনিয়তই নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি সমস্যা নিচে তুলে ধরা হলোঃ

    মূলধনের অভাব:

    পূর্বের মতো বর্তমানের কৃষকদের গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু নেই। তারা অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করে। তাই অনেকসময়ই মূলধনের অভাবে তারা সঠিক কাজটি ঠিক সময়ে করতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

    প্রশিক্ষণের অভাব:

    আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কৃষিতে উন্নয়নের জন্য দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষক। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকই অদক্ষ ও অশিক্ষিত। তারা তাদের বাবা-দাদার আমলে যে নিয়ম দেখে এসেছে সেই নিয়মেই এখনো তারা তাদের ফসল তৈরির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দেশে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই। তাই প্রশিক্ষণের অভাবে দেশের কৃষিখাত ক্ষতিরগ্রস্থ হচ্ছে।

    কৃষি উপকরণের অভাব:

    বাংলাদেশের কৃষকেরা অধিকাংশই গরিব। ভোঁতা সেই লাঙল আর জীর্ণ-শীর্ণ বলদই তাদের একমাত্র সম্বল। উন্নত দেশের মতো তাদের নেই ফসল ফলানোর যন্ত্র, উন্নত জাতের বীজ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি। ফলে চাষাবাদের দিক দিয়ে দেশ ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে।

    সেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা: 

    বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকেরাই সেচ ব্যবস্থার জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। শুকনো মৌসুমে বৃষ্টি না হলে তারা সময়মতো জমিতে সেচ দিতে পারে না। ফলে তারা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

    প্রাকৃতিক দুর্যোগ: 

    প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। প্রতিবছরই প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে দেশের অনেক ফসল নষ্ট হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহনীয় ফসলের জাত উদ্ভাবন হলেও কৃষকেরা সেই ধানের বীজ থেকে এখনো বঞ্চিত।

    ত্রুটিপূর্ণ বাজার:

    আজকের দিনে আমাদের কৃষিবাজারে ত্রুটির শেষ নেই। তাই কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে অনেক কম দামে কৃষকের ফসল কিনে চড়া দামে বিক্রি করে নিজেদের উদর পূর্তি করছে আর কৃষকদেরকে পথে বসাচ্ছে।

    সংরক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটি: 

    আমাদের দেশে প্রতিবছরই কিছু ফসল অনেক উৎপাদিত হয়। কিন্তু সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে কৃষক তা অনেক কম দামে তাড়াতাড়ি বেচে দিতে বাধ্য হন। এছাড়াও অনেকসময় দাম কমানোর পরেও ফসল পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে কৃষক তার ন্যায্য ফসলের মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

    কৃষকদের দুরবস্থার কারণ:

    আমাদের দেশে লোকসংখ্যার তুলনায়  জমির পরিমাণ অনেক কম। জমির স্বল্প আয়ে তাদের সংসার চলে না। তারা শিক্ষার আলো থেকে হয় বঞ্চিত। তাই বিজ্ঞানের আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তাদের ধারণাও থাকে কম। ভোঁতা লাগল আর জীর্ণ-শীর্ণ বলদ দিয়েই তারা এখনো কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্রের অভিশাপে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও উন্নতমানের সার তারা ব্যবহার করতে পারছে না। ক্রমাগত একই চাষের ফলে জমির উর্বরা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আবার এই সামান্য যে ফসল তারা উৎপাদন করছে তারও সঠিক মূল্য তারা পাচ্ছে না। তাছাড়া বন্যা, ঘুর্ণিঝড়ের মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছরই আমাদের কৃষির উপর আঘাত হানে। যার কারণে আমাদের দেশের কৃষকের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

    কৃষি খাত এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য করণীয়:

    বাংলাদেশের কৃষিখাতের সমস্যাগুলোর সমাধান করে অতি শীঘ্রই কৃষকের উন্নয়নের জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার। এর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলোঃ

    ১. কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
    ২. কৃষকদের হাতে কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি তুলে দিতে হবে।
    ৩. ভূমিহীন গরিব কৃষকদের ভূমির ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৪. শুকনো মৌসুমে জমিতে সেচ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।
    ৫. কৃষকদেরকে স্বল্প বা বিনা সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৬. কৃষি বাজারের সকল ত্রুটি দূর করে কৃষকের ন্যায্য মূল্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
    ৭. কৃষিপণ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

    উপসংহার:

    কৃষকের ভাগ্যের সাথে এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হলো কৃষি। এই মেরুদন্ডকে সোজা রাখতে হলে অর্থাৎ এদেশের উন্নতির করতে হলে তাই সর্বপ্রথম কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন করতে হবে। নয়তো দেশের সার্বিক উন্নতি ও পরিকল্পনা ব্যাহত হবে। এই গুরুদায়িত্ব কারো একার পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব আমাদের সবার তথা দেশের সকল জনগণের। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদেরকেও কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।



    Related Posts:

    Disqus Comments
    © 2020 রচনা স্টোর - Designed by goomsite - Published by FLYTemplate - Proudly powered by Blogger